মোশারফ হোসেন লিটন সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদীতে বিট বালুর নামে সিলিকা বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এতে সরকার রাজস্ব হারাবে এবং পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই দ্রুত এ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ধোপাজান নদী সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। দীর্ঘদিন ধরে ইজারা না থাকায় নদীটিতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন হয়েছে, যার ফলে নদীর দুই পাড়ে ভাঙন, গ্রাম, রাস্তা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে নদীর গভীরতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০-৪০ ফুটে। গত বছরের ৫ আগষ্টের পর শতকোটি টাকার বালু লুট হয় নদীতে। নদীতে বালু লুটের অত্যাচার থামতে না থামতেই ফের অক্ষয়নগর, রামপুর, রাতারগাও এই তিন মৌজা থেকে বিট বালু উত্তোলনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা-সিলেট করিডোর উন্নয়ন কাজের জন্য সাসেক প্রকল্পের আওতায় ঢাকার লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, নদীতে বিট বালু নেই—এখানে উন্নতমানের সিলিকা বালুই পাওয়া যায়, যা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম সদরুল অভিযোগ করে বলেন, পুরনো ড্রেজার সিন্ডিকেট বৈধতার নামে নতুন কৌশলে বালু লুট করতে চায়। শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারিভাবে ইজারা দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের দাবি জানান তিনি।
বারকি শ্রমিক সংঘের সভাপতি নাসির মিয়া বলেন, বিট বালুর নামে সিলিকা বালু লুটের ফাঁদ পেতেছে একটি প্রভাবশালী মহল। এমন ফন্দি না করে সরকারিভাবে ইজারা প্রদান করে সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ শাহেদা আখতার জানান, ধোপাজান নদী এখন বিধ্বস্ত। এটিকে পরিবেশ, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণার জন্য ২০১৩ সালে আদালতে বেলার পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। যারা সরাসরি ধোপাজান মহালটি ইজারা নিতে পারছেননা, তারাই এই পদ্ধতিতে সিলিকা বালু লুটের ফন্দি এঁটেছেন। প্রকল্পটি বাতিল করা হোক।
বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের সিলেট বিভাগীয় উপ- পরিচালক শরীফ ইসলাম বলেন, ধোপাজান নদীতে বিআইডব্লিউটিএ'র হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগ সার্ভে করে বিট বালুর সন্ধান পেয়েছে। তাদের সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে বালু মাটি উত্তোলনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব বালু মাটি ঢাকা - সিলেট হাইওয়ে সড়কের কাজে ব্যয় করা হবে।
অন্যদিকে, জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানিয়েছেন, ধোপাজান নদীতে সিলিকা বালু পাওয়া যায় এবং এ খাতটি খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন। এখান থেকে বালু উত্তোলন হলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।